রাজশাহী থেকে সিলেট কম খরচে
রাজশাহী থেকে সিলেটে ভ্রমণ অনেকেরই স্বপ্ন। তবে সীমিত বাজেটে এই যাত্রা সুন্দরও স্মরণীয় করে তোলা কিছু পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে। সঠিক রুট , সাশ্রয়ী হোটেল এবং কম খরচে খাওয়ার এর না থাকলে টি প নয় হয়।
সিলেটের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গেলে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা জরুরী। এই ব্লগে
আমরা দেখাবো কিভাবে কম খরচে রাজশাহী থেকে সিলেটে ট্রিপ পরিকল্পনা করা যায় ।
পাঠকরা সহজে এবং কার্যকর ভাবে নিজেদেরকে খরচও সময় বাঁচাতে পারবে না।
সূচিপত্রঃ
- সিলেট কম বাজেটে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি
- সেরা ভ্রমণ সময় নির্বাচন
- বাসে যাত্রা
- ট্রেনে যাত্রা
- প্লেনে যাত্রা
- প্রাইভেট কার বা রাইড শেয়ার
- সাশ্রয়ী হোটেল ও অ্যাকোমোডেশন
- খাবার ও স্থানীয় ফুড
- সিলেটের দর্শনীয় স্থান
- ট্রিপ নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি
- শেষ কথা
সিলেট কম বাজেটে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি
সিলেটে কম বাজেটে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া প্রতিটি পর্যটকের জন্য অত্যন্ত জরুরী। সীমিত খরচে সুন্দর একটি ট্রিপ করতে চাইলে আগে থেকেই গন্তব্য নির্ধারণ , যাতায়াতের মাধ্যম নির্বাচন এবং বাজে প্ল্যান করা দরকার। ভ্রমণের জন্য কত টাকা খরচ হবে তা আগেভাগে হিসাব করলে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়ানো যায়। এছাড়া ব্যাগ গোছানোর সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র , পোশাক ও প্রাথমিক চিকিৎসার জিনিসপত্র অবশ্যই নিতে হবে
যারা সিলেটে সাশ্রয়ী ভ্রমন করতে চান , তাদের জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা সবকিছুর ভিত্তি। যাত্রার সময় অনুযায়ী সিজন বা অক্সিজেন নির্বাচন করলে খরচ অনেকটা কমে যায়। আগে থেকে বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করলে ভাড়াও সাশ্রয় হয়। একই ভাবেই থাকার জায়গার বুকিং অনলাইনে করলে ভালো ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে সিলেটে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিলে কম বাজেটেও এক আনন্দময় ও ঝামেলা হীন ভ্রমণ উপভোগ করা সম্ভব ।
সেরা ভ্রমণ সময় নির্বাচন
সিলেট ভ্রমণের ক্ষেত্রে সঠিক সময় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মৌসুম ভেদে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তিত হয় , আর ভ্রমণ খরচ কম বেশি হয় ।
- শীতকাল (অক্টোবর-মার্চ): এটি সিলেট ভ্রমণের জন্য সেরা মৌসুম । আবহাওয়া ঠান্ডা ও আরামদায়ক থাকে , আকাশ থাকে পরিষ্কার । এই সময়ের চা বাগান সবুজে ভরা থাকে , জাফলং , লালাখাল বা বিছানাকান্দি ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা হয় অনেক সুন্দর । পর্যটকের ভিড় বেশি থাকলেও আবহাওয়ার কারণে ভ্রমণ আনন্দদায়ক হয়।
- বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর): প্রকৃতি প্রেমিকদের জন্য বর্ষা অসাধারণ। পাহাড়ে ঝরনা ও নদী গুলোতে প্রাণীর প্রবাহ বেড়ে যায় , প্রকৃতি সবুজ ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তবে এ সময় রাস্তাঘাটে কাদা, পাহাড়ি বন্যা বা অতিরিক্ত বৃষ্টির ঝুঁকি থাকে , তাই প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়।
- গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল-মে): এ সময় সিলেট তুলনামূলক কম ভিড় হয় । গরম কিছুটা কষ্টকর হলেও বাজেট ভ্রমণকারীদের জন্য আদর্শ , কারণ হোটেল ভাড়া ও যাতায়াত খরচ অনেকটা কমে যায় । যারা খরচ বাজে ঘুরতে চান , তাদের জন্য এটি ভালো সময় ।
বাসে যাত্রা
রাজশাহী থেকে সিলেটে কম খরচের ভ্রমণের সবচেয়ে সহজ উপায় হল বাসে যাত্রা করা। যদিও সরাসরি রাজশাহী থেকে সিলেটগামী বাস খুব বেশি পাওয়া যায় না , তবে ঢাকাকে সংযোগ রুট হিসেবে ব্যবহার করলে আরামবাগ ভাবে ভ্রমণ করা সম্ভব।
- সংযোগ রুট: রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে অনেক এক্সিকিউটিভ ও লোকাল বাস ছাড়ে। গ্রীন লাইন , শ্যামলী , দেশ ট্রাভেলস , হানিফ সহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস এই রুটে চলে । ঢাকা পৌঁছে সায়েদাবাদ, মহাখালী বা ফকিরাপুল থেকে সিলেটগামী বাস পাওয়া যায় ।
- ঢাকা-সিলেট বাস: এই রুটে হানিফ , সৌদিয়া , এনা , শ্যামলী , স্কাই লাইন সহ অনেক পরিবহন সার্ভিস রয়েছে । দিন রাত উভয় সময় বাস চলে , তাই যাত্রীরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী সময় বেছে নিতে পারেন ।
- ভাড়া ও সময়কাল: রাজশাহী-ঢাকা ভাড়া সাধারণত ৬০০-৮০০ টাকা এবং এসি বাসে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ঢাকা-সিলেট বাসবারের সাধারণ বাসে ৬০০-৮০০ টাকা এবং এসি কোচে ১০০০-১৫০০ টাকা। পুরো জায়গায় খরচ পড়ে প্রায় ১৫০০-২২০০ টাকার মধ্যে অর্থাৎ যা- আশা মিলিয়ে নন এসি বাসে খরচ পড়বে ২৪০০-৩২০০ টাকা এবং এসি বাসে ৪৮০০ -৫৪০০ টাকা। সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা ।
- সুবিধা: বাসের টিকিট তুলনামূলকভাবে সহজে পাওয়া যায়। রাতে ঢাকাগামী বাস ধরলে সকালে সিলেটের বাসে ওঠা যায় , ফলে যাত্রা অনেকটা সুন্দর হয়।
- টিপস: ভ্রমণের জন্য যতটা সম্ভব নামকরা পরিবহন বেছে নেওয়া ভালো , যাত্রা নিরাপদ ও আরামদায়ক হয় । রাতের বাজে ভ্রমন করলে সময় ও এক রাতের হোটেল ভাড়া বাঁচানোর যায়।
ট্রেনে যাত্রা
রাজশাহী থেকে সিলেটের সরাসরি ট্রেন নেই , তাই যাত্রীদের ঢাকাকে সংযোগ রুট হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। ট্রেন তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক এবং সাশ্রয় ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয়।
- রাজশাহী-ঢাকা: রাজশাহী থেকে ঢাকার জন্য পদ্মা এক্সপ্রেস , ধুমকেতু এক্সপ্রেস , বনলতা এক্সপ্রেস সহ কয়েকটি ট্রেন চলে। সাধারণ আসনের খরচ প্রায় ৪০০-৪৫০ টাকা এবং এশিয়া আসনে প্রায় ৯০০-১৩০০ টাকা। যাত্রার সময় প্রায.৪-৫ ঘন্টা লাগে।
- ঢাকা-সিলেট: ঢাকা গামী ট্রেন ধরার পর , ঢাকা থেকে সিলেটগামী ট্রেন ধরতে হবে। উপবন এক্সপ্রেস , পারাবত এক্সপ্রেস , জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এই রুটে চলাচল করে । সাধারণ আসনের খরচ প্রায.৩৫০-৫৭৫ টাকা এবং এসি আসনে ৮৬০-১৩০০ টাকা। সময় প্রায় সাত থেকে আট ঘন্টা লাগবে।
- মোট খরচ: নন এসে আসনে পুরো যার যার খরচ একপাশে প্রায় ৭৮০-১৪৯০ টাকা। এসে আসনে প্রায় ১৭০০-২৬৭৫ টাকা। যাওয়া আসা মিলিয়ে খরচ নন এসি প্রায় ১৫৭০ থেকে ২৯৮০ টাকা এবং এসি প্রাই ৩৫৫০ থেকে ৫৩৫০ টাকা।
- টিকিটের সুবিধা: আগেভাগে অনলাইনে টিকিট কেটে রাখা ভালো। রাতের ট্রেনে যাত্রা করলে সময় এবং হোটেল ভাড়া একদিন কমে যায়। রেলস্টেশন থেকে শহরের হোটেল বা গেস্ট হাউসে পৌঁছাতে রিকশা বা সিএনজি অটো রিক্সা বা রাইট শেয়ার অ্যাপ(পাঠাও, উবার) ব্যবহার করা যায়। ভাড়া সাধারণত ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। যারা আগে থেকে হোটেল বুকিং করে তারা সহজে এবং সাশ্রয় ভাবে পৌঁছাতে পারেন ।
প্লেনে যাত্রা
রাজশাহী থেকে সিলেট সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই , তাই সাধারণত ঢাকা বা চট্টগ্রাম হয়ে সিলেটে পৌঁছাতে হয়। দ্রুত এবং আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য বিমান একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।
- রাজশাহী-ঢাকা: রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর'/হাজী মোঃ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নিয়মিত ফ্লাইট চলে। সময় প্রায় এক ঘন্টা দশ মিনিট। ভাড়া সাধারণত ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, যা এয়ারলাইন এর ধরনও বুকিং সময় অনুযায়ী পরিবর্তন হয়।
- ঢাকা-সিলেট: ঢাকার বিমানবন্দর থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইট সময় প্রায় এক ঘন্টা তারা প্রায় ২৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা।
- মোট খরচ: একপাশে মোট খরচ প্রায় ৪৫০০ থেকে ৭৫০০ টাকা হতে পারে। যাওয়া আসা মিলিয়ে খরচ প্রায় ৯ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
- সুবিধা: ফ্লাইটে যাত্রা সবচেয়ে দ্রুত, আরামবাগ এবং ক্লান্তি কম । যারা সীমিত সময় ভ্রমণ করতে চান , তাদের জন্য উপযুক্ত।
- সিলেট পৌঁছে হোটেল যাওয়ার ব্যবস্থা: বিমানবন্দর থেকে শহরে হোটেল বা গেস্ট হাউসে পৌঁছতে রিক্সা, সিএনজি ট্যাক্সি বা রাইডশেয়ার অ্যাপ (পাঠাও , উবার) ব্যবহার করা যায়। শহরের কেন্দ্রস্থলে হোটেল প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছায়, ভাড়া সাধারণত ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
প্রাইভেট কার বা রাইড শেয়ার
রাজশাহী থেকে সিলেট দীর্ঘ ভ্রমণ আরো আরামদায়ক করতে চাইলে প্রাইভেট কার বা রাইড শেয়ার ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই অপশনটা অনেক সুবিধা জনক।
- যাত্রার সময়ঃ প্রাইভেট কারের রাজশাহী থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১০-১২ ঘন্টা। পথে খাবারও বিশ্রামের জন্য ২-৩ বারবিরতি দিলে যাত্রা আরো আরামদায়ক হয়।
- খরচের হিসাবঃ নিজস্ব গাড়ি হলে খরচ মূলত জ্বালানি , টোল ও খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। আনুমানিক মোট খরচ পড়বে প্রায় ৮,০০০-১০,০০০ টাকা (গাড়ির ধরনও জ্বালানের হিসাব অনুযায়ী)। যদি রেন্ট এ কার নেওয়া হয় তবে প্রতিদিন ভাড়া ৪,০০০-৬,০০০ টাকা হতে পারে , তার সঙ্গে ড্রাইভার এর খরচেও জ্বালানি যোগ হবে। রাইট শেয়ার প্ল্যাটফর্ম (পাঠাও কার , ওভাই , অথবা স্থানীয় অ্যাপস)ব্যবহার করলে খরচ ভ্রমণকারীর সংখ্যার উপর নির্ভর করে ভাগ হয়ে যায় , এতে মোট খরচ তুলনামূলকভাবে কম আসে।
- সুবিধাঃ
- পথে ইচ্ছামত যাত্রা বিরতি নেওয়া যায়
- পরিবারের বাচ্চা বা বয়স্কদের জন্য আরামদায়ক যাত্রা হয়
- একাধিক শহর ভ্রমণ বা দর্শনের স্থানে ঘুরে যাওয়ার সুযোগ থাকে
- সিলেট পৌঁছে হোটেল এ যাওয়ার ব্যবস্থাঃ সিলেটে পৌঁছানোর পর হোটেল শহরের কেন্দ্রে সহজে পাওয়া যায়। প্রাইভেট কার থাকলে সরাসরি হোটেলের দরজায় পৌঁছানো যায়। রাইড শেয়ারের ক্ষেত্রে সিলেট শহরের নেমে ধানের সিএনজি বা রিকশা ব্যবহার করে সহজে হোটেলে যাওয়া যায়।
সাশ্রয়ী হোটেল ও অ্যাকোমোডেশন
সিলেটের ভ্রমণের ক্ষেত্রে থাকার জন্য বাজেট-ফ্রেন্ডলি অনেক ভালো অপশন আছে। যারা কম খরচে আরামদায়কভাবে থাকতে চান তাদের জন্য শহরের ভেতরে এবং আশেপাশে বেশ কিছু হোটেলও গেস্ট হাউস রয়েছে।
- হোটেল দাম রেঞ্জঃ সাধারণত সিলেট শহরের বাজেট হোটেল গুলোর ভাড়া প্রতি রাতে৮০০-১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এই হোটেল গুলোতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সুবিধা যেমন-এসি/নন এসি রুম, ফ্রি ওয়াইফাই , ২৪ ঘন্টা রিসেপশন ইত্যাদি থাকে।
- গেস্ট হাউজ ও ডরমেটরিলঃ একা ভ্রমণকারীদের জন্য ডরমেটরি বা গেস্ট হাউস ভালো অপশন। এখানে প্রতি রাতে ৪০০-৬০০টাকা শেয়ারড রুমে থাকা যায়।
- এয়ারবিএনবি ও ফ্যামিলি স্টেঃ সিলেট এ এখন এয়ার বিএনবি এর মধ্যে ফ্ল্যাট বা ছোট ঘর ভাড়া নেয়া যায়। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে গেলে একসঙ্গে থাকার জন্য এগুলো অনেক সাশ্রয়ী হয়, প্রতি রাতে প্রায় ১২০০-২০০০ টাকায় ৩-৪ জন একসাথে থাকতে পারে।
- অবস্থান বাছাই ঃ যারা মূল শহরে থেকে মার্কেট ও রেস্টুরেন্ট সহজে যেতে চান , তারা জিন্দা বাজার , আমবর খানা বা শাহিব কা এলাকার হোটেল বেছে নিতে পারেন। আবার যারা শান্ত পরিবেশে থাকতে চান, তারা শালুটিকর বা হযরত শাহজালাল (রাঃ) মাজার সংলগ্ন এলাকায় হোটেল নিতে পারেন।
খাবার ও স্থানীয় ফুড
সিলেটে ভ্রমণ মানেই শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, এখানে রয়েছে এক ভিন্ন স্বাদের খাবারের জগত । কম খরচে সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে চাইলে সিলেট একবারে আদর্শ জায়গায়।
- স্থানীয় খাবারঃ সিলেটের বিখ্যাত সাতকরা গোস্ত খাসির ঝাল ঝোল, পাট কপি ভর্তা , শুটকি মাছের ভর্তা-এসব খাবার ভ্রমণকারীদের মাঝে খুব জনপ্রিয়। স্থানীয় হোটেল রেস্টুরেন্ট গুলোত.১০০-১৫০ টাকার মধ্যে ভাত, ডাল , ভর্তা আর মাছ/মাংসের প্লেট পাওয়া যায়।
- চা ও পানীয়ঃ চায়ের শহর হিসেবে পরিচিত সিলেটে গেলে গুলির চায়ের দোকান গুলোতে থ্রি-কালার বা লেয়ারড যা অবশ্যই খাওয়া উচিত। প্রতিটা প্রায় ২৫ থেকে ৫০ টাকা।
- স্ট্রিট ফুডঃ আম্বরখানা, জিন্দাবাজার বা দরগাহ এলাকার আশেপাশের সন্ধ্যায় বিভিন্ন স্টল বসে। সেখান থেকে চটপটি , ফুচকা , সিঙ্গারা , পিঁয়াজু ইত্যাদি পাওয়া যায় মাত্র ৫০ থেকে ৭০ টাকায়।
- রেস্টুরেন্ট অপশনঃ বাজে ট্রাভেল্লারদের জন্য ছোট রেস্টুরেন্ট গুলো আদর্শ । তবে চাইলে ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট বা বিখ্যাত চাইনিজ-ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টেও খেতে পারবেন , যেখানে খরচ জনপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা হতে পারে।
- বিশেষ ডিশঃ সিলেটের মাটির হাড়িতে রান্না করা ঝাল মুড়ি ও শুটকি ভর্তা একবার দেখে না দেখলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
সিলেটের দর্শনীয় স্থান
সিলেটের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সে বুঝে মোরা চা বাগান, পাহাড়ে নদী আর মায়াবী প্রকৃতির সৌন্দর্য। যারা কম বাজেটে ভ্রমণ পরিকল্পনা করেন , তাদের জন্য সিলেটে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেখানে অল্প খরচে ঘুরে দেখা যায়।
- হযরত শাহজালাল (রহঃ) দরগাহ: সিলেট শহর এর কেন্দ্রীয় অবস্থিত এই দরগাহ অত্যাধুনিক শান্তি ও ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন শত শত ভক্ত ও পর্যটক এখানে আসেন। প্রবেশের কোন খরচ নেই ।
- হযরত শাহপরান (রহঃ) দরগাহ: শাহজালাল দরগা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত আর একটি অত্যাধুনিক স্থান।
- জাফলং: সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জাফলং মূলত পাহাড়ের নদী , ঝর্ণা আর পাথরের জন্য বিখ্যাত। ভ্রমণের জন্য লোকাল বাস বাস সিএনজি সহজে পাওয়া যায়। সিলেট থেকে জাফলং যেতে খরচ প্রায় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।
- পাঙ্গুয়া/পিয়াইন নদী ঃ জাফলং ঘুরতে গেলে নৌকায় নদী ভ্রমণের মজা নিতে পারে। ভাড়া প্রায় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা (নৌকা ভেদে)।
- মালনিছড়া চা বাগানঃ একটি দেশের সবচেয়ে পুরনো চা বাগান, যা ছেলের শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে। এখানে ঢুকতে আলাদা টিকিট লাগেনা।
- মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতঃ দেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত গুলোর একটি। মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত হলেও সিলেট ভ্রমণে এটি অবশ্যই যুক্ত করা যায়। প্রবেশ টিকিট জন প্রতি মাত্র ২০ টাকা।
- রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট: এটি বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন। নৌকায় ভ্রমণের জন্য এখানে ভাড়া জনপ্রতি 200 থেকে 300 টাকা হতে পারে। বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ।
- লালাখালঃ নীলাভ সবুজ পানের জন্য বিখ্যাত এই স্থানটি সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে। এখানে নৌকা ভ্রমণ অন্যতম আকর্ষণ।
- বিছানাকান্দিঃ পাথর ,পাহাড় আর স্বচ্ছ জলের এক অপূর্ব মিলনস্থল। বর্ষাকালে এটি আরো মনোমুগ্ধকর হয়। ভ্রমণের জন্য জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা সিএনজি ভাড়া ধরতে পারেন।
- শ্রীমঙ্গলঃ চা বাগান , লেবু বাগান আর সাত রঙ্গা চা এর জন্য বিখ্যাত। শ্রীমঙ্গলকে সাধারণত চায়ের রাজধানী বলা হয়। এছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণকারীদের অন্যতম আকর্ষণ। শ্রীমঙ্গল সিলেট থেকে কিছুটা দূরে হলেও একদিনের মধ্যে ভ্রমণ পরিকল্পনা করলে সহজেই কভার করা যায়। বাসবা মিনিবাসে গেলে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা বা খুব বেশি হলে ৩০০ টাকার মধ্যে যাওয়া আসা হয়ে যাবে এবং সিএনজি বা প্রাইভেট কার নিলে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে সারা দিনের জন্য ভাড়া করা যেতে পারে।
ট্রিপ নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি
সিলেট বা শ্রীমঙ্গলের যাত্রার নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যবান জিনিসপত্র সীমিত রাখুন এবং হালকা, আরামদায়ক পোশাক পড়ুন । আবহাওয়া অনুযায়ী ছাতা বা রেইনকোট , হাঁটার জন্য সুবিধার জন্য জুতা সঙ্গে রাখুন। কোথায় কত সময় কাটাবেন এবং যাতায়াতের মাধ্যমে।
খাবার ও পানির দিকে সতর্ক থাকুন , রাস্তার খাবার নিরাপদ জায়গা থেকে খান। জরুরি অবস্থার জন্য স্থানীয় হাসপাতাল , পুলিশ স্টেশন এবং ফোন নাম্বার নোট করে রাখুন । এছাড়াও বিশেষভাবে পাহাড়ি এলাকা বা দুর্গম স্থানে গেলে লোকাল গাইড বা নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। লোকাল গাইডের খরচ সাধারণত প্রতিদিনের জন্য ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হতে পারে।
শেষ কথা
সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে কম বাজেটে ভ্রমণ পরিকল্পনা করলে আরামদায়ক ও স্থানীয় যাত্রা নিশ্চিত করা যায়। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন , নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন এবং স্থানীয় পরিবহন ও দর্শনের স্থানগুলোকে বাজেট অনুযায়ী ব্যবহার করুন এতে আপনার ঠিক হবে নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী ও আনন্দদায়ক।
=iramedge নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url